ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা

ব্যায়াম আমাদের শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম করার উপকারিতা অনেক। ব্যায়াম শুধু পেশি গঠন করার জন্য করা হয় না। ব্যায়াম করার ফলে আমাদের দেহের অনেক বড় বড় অসুখ হওয়া থেকে রক্ষা করে। আমরা অন্যকেই জানি না যে,কখন ব্যায়াম করতে হয় কীভাবে ব্যায়াম করতে হয় এবং ব্যায়াম করার উপকারিতা কী আর অপকারিতা কী?

ফিচার ইমেজঃ ১

তাই আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত সব তথ্য দিব। যা নিয়মিত মেনে চললে আমাদের জীবনের রূপরেখা পরিবর্তন হবে এবং জীবন হয়ে উঠবে অনেক সুন্দর ও আনন্দময়। তাই আর দেরি না করে চলুন সকল তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

পেজ সুচিপত্র

কেনো নিয়মিত ব্যায়াম করা প্রয়োজনীয়

বর্তমান সময়ে মানুষ অনেক অসুস্থ হচ্ছে এবং চিকিৎসার খরচও অনেক বেশি। যার কারনে চিকিৎসার খরচ বহন করা আমাদের জন্য অনেক কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কিন্তু আমরা যদি নিয়ম অনুযায়ী কিছু ব্যায়াম করি তাহলে আমরা আমাদের শরীর কে সুস্থ ,সুন্দর ও রোগমুক্ত করতে পারি।আমরা আমাদের শরীরকে ভালো রাখার জন্য,যেসব নিয়ম বা পদক্ষেপ নিতে পারি তা চিন্তা করতে গেলেই ব্যায়ামের কথা প্রথমেই আসে। আমাদের শরীর ভালো, সুস্থ, সুন্দর ও রোগমুক্ত রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করার গুরুত্ব অনেক। 

বর্তমান সময়ে আমরা অনেকেই আছি যারা, অলস এবং শুয়ে বসে সারাদিন কাটিয়ে দিই এবং অনেকেই আছি যারা নিয়মিত ব্যায়াম করি। ব্যায়াম আমাদের শরীরকে সুস্থ এবং রোগমুক্ত রাখে এককথায় সুস্বাস্থ্যর জন্য ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করা আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন।এটি দেহের খাবার হজম করতে ও দেহে শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে দেহের অতিরিক্ত চর্বি ঝরে এবং ক্যালরি ক্ষয় হয়। নিয়মিত ব্যায়াম করলে মেজাজ ভালো থাকে।

কখন ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময়

অনেকেই আছেন যারা অনেক সময় ব্যায়াম করে থাকেন ,কেউ সকালে কেউ বিকালে আবার কেউ রাতে। ব্যায়াম করা দেহের জন্য ভালো কিন্তু,ব্যায়াম করে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু সময়ই রয়েছে, যে সময় ব্যায়াম করলে উপকার পাওয়া যাই। অনেক গবেষণাই পাওয়া গিয়েছে যে সকাল সকাল ব্যায়াম করার জন্য একটি উত্তম সময়। সারারাত ঘুমের পর সকাল বেলায় মন ফ্রেস থাকে, আর এ সময় ব্যায়াম করলে সারাদিন শরীর ও মন সতেজ থাকে এবং আমাদের সারাদিনের সকল কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি করে।
তাছাড়া বিকালেও ব্যায়াম করা যাই। বিকালে ব্যায়াম করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় । কিন্তু বিভিন্ন কাজ বা ব্যস্ততা থাকার কারণে আমাদের দিনে ব্যায়াম করা হয় না। যার কারণে অনেকে রাতে ব্যায়াম করে থাকে।দুপুর এ ব্যায়াম করা যাই কিন্তু না করায় ভালো কারণ দুপুর এ গরম থাকে এবং ব্যায়াম করলে ক্লান্তি হয়। আর ব্যায়াম করার জন্য দরকার ঠাণ্ডা আবহাওয়া। তাই ব্যায়াম করার জন্য ভালো সময় হচ্ছে সকাল, বিকাল, রাত এছাড়াও ব্যায়াম যেকোনো সময় করা যায়।

কখন ব্যায়াম করার উপযুক্ত বয়স

ব্যায়াম করার জন্য অবশ্যই একটি উপযুক্ত বয়স রয়েছে। তাই বয়স অনুযায়ী ব্যায়াম করতে হবে।কেননা একেক বয়সে দেহের গঠন ও ধারণক্ষমতা একেক রকমের হয়ে থাকে। মূলত ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়সে আমাদের শরীর শক্ত এবং ব্যায়াম করার জন্য উপযোগী হয়। তাই আমাদের উচিত হবে কম বয়সে জিমে না যাওয়া ও কাঠর ব্যায়াম না করা।

আমাদের উঠতি বয়সে শরীরকে ভালোভাবে  বেড়ে উঠতে বেশি ভালো হবে সাঁতার , খেলাধুলা, দড়াদড়ি করার মতো শারীরিক ব্যায়াম করা। কেননা আমাদের কম বয়সে এই সব ব্যায়াম ছাড়া কোনো হার্ড ব্যায়াম করলে শরীর তা নিতে পারবে না এবং দেহের  অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই উপযুক্ত বয়সে ব্যায়াম করতে হবে।

ব্যায়াম করার সময় যেসব ভুল করা জাবে না

শরীর সুস্থ ও সুন্দর রাখার জন্য ব্যায়াম করতে হয়। কিন্তু ব্যায়াম করার সময় কিছু ভুলের কারণে আমাদের ব্যায়াম করার উপকার ব্যাহত হয়। আমরা অনেকেই আছি যারা দ্রুত ফলাফল পাওয়ার আশায় অনেক তাড়াতাড়ি এবং অনেক ভারী ব্যায়াম করি।এতে আমাদের শরীরের ভালোর থেকে খারাপ হয় বেশি। শরীরচর্চাই কখনো তারাতাড়ি ফল পাওয়া যায় না। এটাই প্রয়োজন ধৈর্য এবং নিয়মিত অনুশীলন। তাই তারাতারি ফল পাওয়ার আশায় উৎসাহী না হয়ে। ধাপে ধাপে সময় নিয়ে শারীরিক ব্যায়াম করা উত্তম এতে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

সপ্তাহে কয় দিন ব্যায়াম করা উচিত

শরীরকে সুস্থ ও সুন্দর রাখার জন্য ব্যায়াম এর গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা অনেকেই আছি যারা জানতে চায় যে সপ্তাহে কয় দিন এবং কতক্ষণ সময় ব্যায়াম করতে হয়। আসলে ব্যায়াম কতোদিন বা কতো সময় বলে কিছু নাই ব্যায়াম প্রতিদিন নিয়ম অনুযায়ী করায় উত্তম। তারপরেও যাদের প্রতিদিন ব্যায়াম করা হয় না। তাদের জন্য অন্তত সপ্তাহে ৫ দিন ২৫-৩০ মিনিট মিডিয়াম বা মাঝারি ব্যায়াম করতে হবে। তাহলে সপ্তাহে দেখা যাবে ১২৫-১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা হবে যা আমাদের দেহের জন্য পর্যাপ্ত।
তাছাড়া সাইকেল চালানো, দড়াদড়ি করা, সাঁতার কাটার মতো ব্যায়াম আমাদের নিয়মিত করা উচিত। এটা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে। ব্যায়াম করার পর শরীরকে যথেষ্ট রেস্ট দিতে হবে। কেননা ব্যায়াম করা যতটা জরুরী ততটাই জরুরী পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুমের। সপ্তাহে নাহলেও ১দিন বিশ্রাম নিতে হবে, যেন শরীর রিকভার করতে পারে।

গবেষণায় যা বলছেঃ 
  • আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়ান (AHA) এক গবেষণাই বলেছেন। শারীরিক সুস্থতা বজাই রাখতে সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম করতে হবে।
  • বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলেছেন যে ২দিন বা ২দিনের বেশি পেশি-শক্তিবর্ধক ব্যায়াম করা উচিত।
  • তাছাড়া মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য এডিথ কোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক প্রফেসর (কেন নোসাকা বলেছেন) দিনে মাত্র ৫মিনিট ইসেন্ট্রিক ব্যায়াম যেমন ধিরে বসা, সিঁড়ী উঠা নামা করলে পেশি শক্তি, সহনশীলতা এবং মানসিক সাস্থের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়।

ব্যায়াম করার উপকারিতা কী কী

আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত করার উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে ব্যায়াম। ব্যায়াম করার উপকারিতা অনেক। ব্যায়াম শুধু পেশি গঠনে সহায়তা করে না এটি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, শরীরের হাড় শক্ত হয় ও শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ে। ব্যায়াম মানসিক চাপ কমায়, যেকোনো জিনিসে মনোযোগ বাড়াই এবং মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসরণ করে মানসিক শান্তি প্রদান করে তাই নিয়মিত ব্যায়াম করা আমাদের দেহের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করলে যা যা উপকার পাওয়া যায় সেগুলো হলো
  1. দেহের শক্তি ও সহ্যক্ষমতা বৃদ্ধিঃ ব্যায়াম আমাদের পেশির শক্তি ও সহনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। ব্যায়াম নিয়মিত করলে শরীর অনেক মজবুত হয়। ব্যায়াম করার ফলে আমাদের শরীরের টিস্যু গুলো শক্ত হয় এবং দেহের কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিনের কাজ গুলো করতে অনেক সহজ হয় এবং দেহে সারাদিন শক্তি থাকে, শরীরে ক্লান্তি কম হয়। 
  2. নিয়মিত ব্যায়াম হাড়ের জন্য উপকারীতাঃ ওজন বহনকারী ব্যায়াম করার ফলে হাড় শক্তিশালী এবং ঘন হয়। ব্যায়াম করার ফলে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়, বিশেষ করে বয়স বাড়ার সাথে সাথে।নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের হাড়ের ঘনত্ব বজাই রাখে, যার কারনে হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যাই।
  3. দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত শরীরচর্চা রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। যার ফলে শরীরের নানা অঙ্গ প্রত্যঙ্গে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেন সহজেই পৌঁছে যায়। আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয় এবং রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এটি আমাদের শরীরের লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমকে আরো ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর জিনিস যেমন টক্সিন বের করে দেয়,যার ফলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে বড় ধরনের রোগ যেমন হৃদরোগ, উচ্চরক্ত চাপ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার এবং অন্যান্য রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমায়। ব্যায়াম আমাদের দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকায়।
  4. ব্যায়াম গভীর ঘুম নিশ্চিত করেঃ নিয়মিত ব্যায়াম ঘুমকে আরো গভীর করতে সাহায্য করে। ব্যায়াম করা হয় তখন আমাদের শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে এবং আমাদের শরীরের অতিরিক্ত শক্তি খরচ হয় যার কারনে শরীরে ক্লান্তি আসে ফলে শরীর আরাম চায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যারা নিয়মিত প্রতিদিন ব্যায়াম করে তারা অনেক তারাতারি ঘুমাতে পারে এবং ঘুম হয় অনেক গভীর। গভীর ও ভালো ঘুম আমাদের শরীরকে পুনর্জীবিত করে, মন কে সতেজ রাখে এবং সারাদিন দেহকে কর্মক্ষম রাখে।
  5. ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। ওজন যদি বাড়ে বা কমে তাহলে সেটি এক ধরনের স্বাস্থ্যঝুকি সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে আমাদের শরীরের অনেক ক্যালরি ব্যায় হয় যার ফলে ওজন কমে। আমরা যখন ব্যায়াম করি তখন আমাদের শরীর অনেক শক্তি ব্যবহার করে যার ফলে শরীরে চর্বি বা ফ্যাট জমতে দেয় না।

ব্যায়াম করার অপকারিতা গুলো হলো




খাবার খাওয়ার কতক্ষণ পর ব্যায়াম করতে হয়




ব্যায়াম করার আগে কী খাবার খাওয়া উচিত



লেখকের শেষ মন্তব্য

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    অপরাজিতা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url